জমির নামজারি বা মিউটেশন না করলে জমির মালিক আপনি নন। হারাতে পারেন আপনার দখল ও জমির মালিকানা। জমি জমার সুরক্ষার, মামলা বা যে কোন সমস্যার হাত থেকে আইন অনুযায়ী জমির নামজারি বা মিউটেশন হতে পারে শক্ত দলিল বা প্রমান। মানুষ সারাজীবনের ভিটা মাটি স্বপ্ন থাকে। ভুমি বা জমি শুধুমাত্র একটি সম্পদ নয় এটি আপনার কষ্টের বা ভালোবাসার ফল যাহা আপনার ভবিষৎ এর নিরাপত্তা বটে।
মিউটেশন কি?
মিউটেশন ইংরেজি শব্দের বাংলা শব্দ হলো পরিবর্তন। এখানে নাম লেখনভুক্ত করা বা জমিজমার ভাগ বা পরিবর্তনকে বুঝায়। সাধারণত জমি ক্রয়-বিক্রয়, উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানা লাভ, বা হিবার মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তনের বা বিভিন্ন কারণে মালিকানা পরিবর্তন হয়ে থাকে। মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার সময় নামজারি করা হয়। ভুমি রেকর্ড আপটুডেট রাখার জন্য ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩ ধারায় কালেকটরকে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার রেকর্ড অব রাইটসকে হালকারণ করে সংরক্ষণ করবেন। এটি তিনি তার প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী বা তহশীদারের সহায়তায় নির্ধারিত পদ্ধতিতে নতুন ভূমি মালিকদের নাম রেকর্ডভূক্ত করার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমি রেকর্ড আপটুডেট করে সংরক্ষণ করবেন।
নামজারি কাকে বলে?
কোন ব্যক্তি যদি ভূমির মালিকানা অর্জন করে তাহলে নিয়মানুযায়ী তার নামেই খাজনা, কর পরিশোধের সুবিধার্থে তার নাম সরকারি নথিতে সংশোধনপূর্বক অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। যাতে তিনি সহজেই খাজনা পরিশোধ করতে পারে বা মালিকানা দাবি করতে পারে। তাই আমরা বলতে পারি যে, নতুন মালিকের নামে নথিতে সংশোধনপূর্বক নতুন নামে জমির তথ্যাদি রেকর্ডভুক্তকরণের আইনানুগ প্রক্রিয়াই হচ্ছে নামজারি।
এক নজরে কুরআন(হার্ডকভার) বিস্তারি:
নামজারি কত প্রকার?
নামজারি মুলত দুই প্রকার হয়ে থাকে। যথা:-
✅ মূল খতিয়ানে নাম কর্তন করে বা ভূমি কিংবা নাম যোগ করে নামজারি করা ।
✅ খতিয়ানের কোন অংশীদার বা নতুন মালিক খতিয়ান হতে বের হয়ে বা খারিজ হয়ে স্বতন্ত্র খতিয়ান খূলতে চাইলে জমাভাগ করে স্বতন্ত্র খতিয়ান খুলে নামজারি করা হয়।
নামজারি বা খারিজ কেন করা প্রয়োজন?
1. আইনি মালিকানা প্রমাণে সহায়তা করে
জমি রেজিস্ট্রি করে ফেললেই আপনি মালিক নন — মিউটেশন না হলে সরকারি রেকর্ডে আপনার নাম থাকবে না। ফলে, ভবিষ্যতে বিরোধ দেখা দিলে আপনি দুর্বল অবস্থানে থাকবেন।
2. ভূমি কর (ভূমি উন্নয়ন কর) দিতে পারবে
ভূমি উন্নয়ন কর (land tax) নিয়মিত দিতে হলে নামজারি বাধ্যতামূলক। কর প্রদানের রসিদ ভবিষ্যতে মালিকানা প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
3. জমির ভবিষ্যৎ লেনদেনে সুবিধা হয়
নামজারি না করলে আপনি জমি আবার বিক্রি, বন্ধক বা ভাগ দিতে পারবেন না। ব্যাংক ঋণ বা যে কোনো জমি-সম্পর্কিত কাজে নামজারি দরকার হয়।
4. উত্তরাধিকার নিশ্চিত হয়
পিতা-মাতার মৃত্যুর পর জমি সন্তানদের মধ্যে ভাগাভাগি করতে হলে, নামজারি আবশ্যক। এটা না হলে উত্তরাধিকার আইন অনুসারে জটিলতা তৈরি হয়।
📝 কখন মিউটেশন করতে হয়?
- জমি ক্রয়-বিক্রয়ের পর
- উত্তরাধিকারসূত্রে জমি লাভ করলে
- দানপত্র, হিবা বা বণ্টননামার মাধ্যমে জমি পেলে
- আদালতের রায়ে জমির মালিকানা পেলে
আপনি যদি ইংরেজীতে ভালো দক্ষ হতে চান তাহলে বই আপনার জন্য হতে পারে ভালো একটি উপহার
নামজারি করার জন্য যে যে কাগজপত্র প্রয়োজন?
১। মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র এর ফটোকপি।
২। দলিলের কপি।
৩। জমির দাগ নাম্বার ও মৌজা
৪। জমির পর্চা
৫। উত্তারাধিকার সম্পদ হলে (ওয়ারিশ সনদ প্রয়োজন)
৬। খাজনা রশিদ
উল্লেখিত কাগজ পত্র গুলি আপনার প্রয়োজন হবে।
নামজারি বা মিউটেশন কিভাবে করবেন?
নামজারি বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে আপনি করতে পারেন। তবে আপনি যদি কাজটি না বুঝে থাকেন তাহলে আমাদের মতমত ইউনিয়ন ভূমি অফিস এর কর্তকর্তাদের সহযোগীতা নিতে পারেন বা অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তি সহযোগীতা কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারেন বলে আমি মনে করি। বর্তমানে নামজরির আবেদন করুন অনলাইনে।
ভূমি নিয়ে বাংলাদেশের বাস্তবতা:
বাংলাদেশের ভুমির পরিমান খুবই কম। দেশে যতগুলি মামলা রয়েছে তার বেশির ভাগই হচ্ছে জমি জমার মামলা। আমাদের দেশে ভুমি প্রতারনা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। দলিল জালিয়াতি, ভূয়া পর্চা, মালিক না হয়েও জমি বিক্রয়, ওয়ারিশনগণ অন্য ওয়ারিশদের জমির দখল না দেওয়া ইত্যাদি নানান ধরনের কিছু হয়ে থাকে আমাদের দেশে। আমাদের দেশে প্রবাসি ও বোন/নারি ব্যক্তিরা এই জটিলাতায় সবচেয়ে বেশি ভোগ করে থাকে। বোনদের/মেয়েদের সম্পদ বেশির ভাগ ভাই ও স্বজনেরা ভোগ দখল করে খায়। আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্ট এ দয়া করে আমাদের সাথে শেয়ার করুন।
উপসংহার:
আপনি সময় ক্ষেপন না করে যত দ্রুত সম্ভব ভুমির মালিক হওয়ার সাথে সাথে নামজরি বা মিউটেশন করুন। এতে করে আপনার ভুমি আইনগতভাবে আপনি রক্ষা করতে পারবেন। আপনি দখল থাকবেন আপনার জমিতে অন্যকোন ব্যক্তিকে বসবাস করতে দিবেন না। আপনার কেহ না থাকলে গাছ লাগাবেন প্রয়োজনে। আপনার মূল্যবান জমির কাগজ পত্র অন্য কোন ব্যক্তির নিকট জমা রাখবেন না। এতে করে আপনি বিপদের পরবেন।
Read More: পুরাতন দলিল বা নকল দলিল পাওয়ার সহজ উপায়
