পুরাতন দলিল কেন প্রয়োজন হয়?
ঘটনা: -১: আপনার দাদা-পিতা বা পূর্ব পুরুষ দের নামে সম্পদ আছে মানুষের মুখে শুনে থাকেন। কিন্তু নিদির্ষ্ট কাগজ বা দলিল না থাকার ফরে এটি দাবি করতে পারেন না। অনেক সময় দেখা যায় যে পুরাতন দলিলের লেখা বুঝা যায় না, বা হারিয়ে গেছে, তেলা পোকা খেয়ে পেলছে, আগুন লেগে পুরে গেছে, ওয়ারিশগন আপনাকে জমির দলিল দিচ্ছে না তখন আপনার এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে খুব সহজেই পুরাতন দলিল বের করুন খুব সহজে নিজেই দালাল ছাড়া।
ঘটনা: ২: দাদা বা বাবার রেখে যাওয়া জমির কাগজপত্র কোথায় আছে, সেটাই খুঁজে পাই না অনেক সময়। অথচ জমিটা রেজিস্ট্রিতে আছে, দলিল হয়েছে, খাজনাও হয়তো দেওয়া হচ্ছে তবু আসল দলিল নেই! তখন শুরু হয় পুরাতন দলিলের খোঁজে এক দালালের দ্বারে অন্য দালালের দ্বারে ছুটোছুটি। পুরাতন দলিল খোঁজা মানেই দালালের দ্বারে দ্বারে ঘোরা, ঘুষ দেওয়া আর অনিশ্চিত প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করা সিদ্ধান্ত গ্রহন করা।
ঘটনা:- ৩: আপনাদের পূর্ব পুরুষদের নামে রেকর্ড আছে কিন্তু আপনাদের কাছে কোন দলিল নাই বা নতুন অন্য ব্যক্তিদের নামে রেকর্ড হয়েছে এই রকম নানা সমস্যা সৃষ্টি জন্য এটির প্রয়োজন হতে পারে। (রেকর্ড হচ্ছে CS, RS, SA, BRS, BS, BDS, City Survey) বিভিন্ন সময় আদালতে মামলা চলাকালিন সময় আপনার দলিল তল্লাসির প্রয়োজন হতে পারে। তাই আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে আপনার স্মার্টফোনটাই হতে পারে জমির মালিকানা রক্ষার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার।
হ্যাঁ, এখন আর দলিল খুঁজতে দালালের পেছনে ছুটতে হয় না—নিজের মোবাইল থেকেই খুব সহজে বের করে নিতে পারেন পুরনো জমির দলিল। এটা এখন কোনো কল্পনা নয়, একেবারে বাস্তবতা।
ঘটনা : -৪: বাংলাদেশের পেক্ষাপটে অনেক ভূয়া মালিক হয়ে থাকে। তারা বিভিন্ন অসত অপায় দলিল তৈরি করে আপনার জমি বিক্রি করে দিতে পারে। জমিতে আপনি বসবাস করেন না। জীবিকার তাগিতে আপনি দেশের বাহিরে থাকেন (প্রবাসি) এলাকার কিছু অসৎ ব্যক্তি বা আত্নীয় স্বজন এবং ওয়ারিশগণ আপনার সম্পত্তি বিক্রি করে দিতে পারে। এই রকম ঘটনা আমাদের মটামটি নিয়মিত দেখে থাকি বা শুনে থাকি। রাতারাতি আপনার জমি দখল হয়ে যায় এবং বালু ভরাট, পাকা দেয়াল নির্মান, গাঁছ রোপন, মাছ চাষ, ফসল কর্তন ইত্যাদি নানান ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে যখন পুরাতন দলিল বা নকল দলিল তল্লাসির প্রয়োজন হয়।
সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হয়ে থাকেন (প্রবাসি এবং নারীরা) সম্পত্তি অর্জনের ক্ষেত্রে। আদালতে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। শুধুমাত্র কাগজ পত্র সঠিকভাবে সংগ্রহন না করার কারণে।

কিভাবে পুরাতন দলিল খুঁজবেন: ধাপে ধাপে গাইড
পরার্মশ ১ :
ধাপ ১: land.gov.bd এ প্রবেশ করুন
ধাপ ২: “খতিয়ান খোঁজুন” অপশন নির্বাচন করুন
ধাপ ৩: জেলা, উপজেলা, মৌজা নির্বাচন করুন
ধাপ ৪: খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর অথবা নাম দিয়ে সার্চ দিন
ধাপ ৫: আপনার জমির খতিয়ান দেখানো হবে
ধাপ ৬: চাইলে PDF ডাউনলোড করতে পারবেন
মতামত: অনেক জেলায় এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ অনলাইন করা সম্ভব হয় নাই। যখন সম্পূর্ণ ডাটা আপডেট হয়ে যাবে তখন আপনি পুরাতন দলিল বের করতে সহজে নিজের মোবাইল দিয়ে – দালাল ছাড়াই ঘরে বসে।
পরার্মশ ২ :
✅মৌজার নাম
✅জেলা ও উপজেলা
✅খতিয়ান নম্বর বা দাগ নম্বর
✅জমির মালিকের নাম (যদি পুরনো মালিক হয়, তাহলে উত্তরাধিকার হিসেবেও সার্চ কাজ করে)
রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে একটি আবেদন করুন: 📜
📌যেখান থেকে দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছিল, সেই সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যান
📌আপনার বাবার নাম, জমির লোকেশন ও সাল জানালে খোঁজে বের করে দিতে পারে
📌আপনি চাইলে সরকারি “দলিল অনুসন্ধান ফর্ম” জমা দিতে পারেন
পরার্মশ ৩ :
যদি আপনি আপনার সাব-রেজিষ্টার অফিসে তথ্যটি না পান তাহলে আপনাকে জেলা রেকর্ড রুমে যোগাযোগ করতে হবে। যদিও বিষয় সহজ না। বলা যতটা সহজ কাজটি ততই কঠিন আমাদের দেশের পেক্ষাপটে। তবে হতাশ হবেন না। আপনি আবার আবেদন করেন যে (রেজি: আইনের ৫২ ধারায়) এটি উল্লেখ আছে যে আপনি চাইলে আপনার নিজেই খুজে দেখতে পারবেন স্বাধীনভাবে। তখন আপনি সর্তকতার সাথে এই কাজগুলি করবেন।
🔰 আপনার এলাকার সাব-রেজিষ্টার অফিসের যাবেন। (তল্লাশি কারকের সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবেন এবং বিস্তারিত বিষয়টি বলবেন) এটি তল্লাশি দেওয়ার জন্য একটি র্নিধারিত ফি আছে সেটি আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। তল্লাশি দেওয়ার পূর্বে।
🔰 সূচিপত্র খুজঁতে হবে। কি খুজবেন । (১নং- বালাম বই। ২নং সূচি বই)
🔰 সাব-রেজিষ্টার অফিসে ২টি বই থাকে।
ক) দাতা-গ্রহিতার নাম দিয়ে খুজতে হবে।
খ) মৌজা ভিত্তিক দাগ নাম্বার দিয়ে সূচি পত্র।
দলিলের নকল তোলার জন্য যা লাগবে:
- আবেদনকারীর পরিচয়পত্র (NID বা জন্মসনদ)
- দলিল নম্বর ও সাল
- রেজিস্ট্রি অফিসের নাম
- আবেদন ফি
- আবেদন ফর্ম (অনেক অফিসে অনলাইনেও পাওয়া যায়)
✅ কত দিনে কপি পাওয়া যায়?
- জরুরি (Express) আবেদন করলে ১–৪ দিনের মধ্যে পাওয়া সম্ভব (ভিন্ন ফি প্রযোজ্য)
- সাধারণভাবে ৪–১২ কর্মদিবসের মধ্যে কপি প্রদান করা হয়।
শেষ কথা:
যেহেতু সম্পদ আপনার তাই আপনাকে একটি শ্রম বা কষ্ট মেনে নিতে হবে। এটি এই কাজগুলি আপনি নিজেই করতে পারবেন । তবে আপনি যদি না বুজেন বা সময় না থাকে তাহলে আপনি অভিজ্ঞ ব্যক্তি দ্বারা কাজটি করাতে পারেন। সেইক্ষেত্রে আইনজীবি, দলিল লেখক বা সার্ভেয়ার দ্বারা কাজটি সহেজেই করাতে পারেন। । সেই ক্ষেত্রে আপনার খরচটি বেশি পড়বে। আমার মতামত অনুযায়ী দলিলটি আপনার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ অন্য ব্যক্তিদের নিকট এটি ততটা গুরুত্ব পূর্ণ নাও হতে পারে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশ নতুন ভূমি জরিপ বা ডিজিটাল সার্ভে (BDS) জরিপ -২০২৫