জন্ম নিবন্ধন কেন গুরুত্বপূর্ণ? কোথায়, কিভাবে করবো?

জন্ম নিবন্ধন কি?
জন্ম নিবন্ধন (Birth Registration) হলো একটি শিশুর জন্মের সরকারি স্বীকৃতি, যা তার নাম, জন্মতারিখ, জন্মস্থান এবং পিতামাতার নামসহ সরকারি রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি একটি মৌলিক অধিকার এবং একজন নাগরিকের প্রথম আইনি পরিচয়পত্র।

জন্ম নিবন্ধন গুরুত্বপূর্ণ কেন?
১. আইনি স্বীকৃতি:
জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রের চোখে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটি ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), পাসপোর্ট, শিক্ষা সনদ, চাকরি কিংবা জমি কেনাবেচায় নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২. শিশুর অধিকার সুরক্ষা:
জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে শিশুর বয়স নির্ধারিত হয়, ফলে বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ইত্যাদি প্রতিরোধ করা সহজ হয়। রাষ্ট্র শিশুর প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও সচেতন থাকে।

৩. পরিকল্পিত উন্নয়ন:
একটি দেশের জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান তৈরি করতে জন্ম নিবন্ধন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সামাজিক সেবার পরিকল্পনা করতে পারে।

জন্ম নিবন্ধন কোথায় ও কিভাবে করবেন?

বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের জন্য গ্রাম বা পল্লীতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌর এলাকার জন্য পৌরসভা এবং শহরের ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন বা এর আওতাধীন অঞ্চল ভিত্তিক অফিসে নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে নিবন্ধন করা যায়। নিচে প্রক্রিয়াটি দেওয়া হলো:

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার ধাপসমূহ:

১. https://bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
২. “জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন” অপশনে ক্লিক করুন।
৩. প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন (শিশুর নাম, জন্ম তারিখ, পিতা-মাতার তথ্য, জন্মস্থান-স্থায়ী ঠিকানা-বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি)
৪. আবেদন কপি প্রিন্ট করুন এবং আবেদন নম্বর সংরক্ষণ করুন।
৫. নির্ধারিত অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উপস্থিত হয়ে আবেদন জমা দিন এবং চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করুন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

  • শিশুর জন্ম প্রমাণ (হাসপাতালের সনদ, টিকা কার্ড বা স্থানীয় প্রতিনিধির প্রত্যয়ন)
  • শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট
  • প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট
  • এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
  • পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র
  • স্থায়ী/বর্তমান ঠিকানার কাগজপত্র

বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের ফি (২০২৫)

  • জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে আবেদন: বিনামূল্যে
  • জন্মের ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত: ২৫ টাকা
  • জন্মের ৫ বছরের বেশি সময় পর আবেদন: ৫০ টাকা

💳 ফি পরিশোধের পদ্ধতি

বর্তমানে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম (e-payment) সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। সুতরাং, আবেদনকারীদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশন অফিসে সরাসরি গিয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হবে। ফি পরিশোধের পর একটি চালান বা রসিদ প্রদান করা হয়, যা আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে।

📌 গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধন করলে কোনো ফি প্রযোজ্য নয়।
  • সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করতে হয়।
  • সনদের কপি সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত ফি প্রযোজ্য হতে পারে।
  • বিদেশে অবস্থানরতদের জন্য ফি স্থানীয় মুদ্রায় নির্ধারিত হতে পারে।

লেখকঃ আজিজুল ইসলাম যুবরাজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *