জাতিসংঘ কর্তৃক প্রবর্তিত মানবাধিকারের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত অধিকার হচ্ছে এমন কিছু বৈধ ক্ষমতা, যা কোনো ব্যক্তি তার বিশেষ অবস্থানের কারণে অনুশীলন এবং ভোগ করে থাকে। কাজেই মানবাধিকার বলতে সেসব অধিকারকে বুঝায় যা একান্তভাবে মানুষ হিসেবে ভোগ করার অধিকারী। মানবাধিকার থেকে উৎসারিত সবটুকু মানুষের একান্ত প্রাপ্য এবং তা শুরু হয় জন্মের পর থেকেই। মানবাধিকার তাই মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি, ব্যক্তিস্বত্ত্বা, মর্যাদা, উদ্যমশীলতা ইত্যাদিকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত ও সংরক্ষণ করে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে সাহায্য করে থাকে ।
১) আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকঃ মানবাধিকার মানুষের সহজাত ও শাশ্বত; সেহেতু এটি এমন একটি বিষয় যা ক্রয়যোগ্য বা বিক্রয়যোগ্য নয়, নয় হস্তান্তরযোগ্য; এমনকি বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে সৃষ্টিও করা যায় না। তাই মানবাধিকারকে বরং প্রাকৃতিক অধিকার বলা যেতে পারে। তাত্ত্বিক বিবেচনায় এটি মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে এমন একটি অধিকারের সূচনা ঘোষিত হয়েছে, যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা অর্জনে ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি পায় ৷
২) আইনের শাসনে সংরক্ষণঃ চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা আবশ্যক হয়ে পড়ে ।
৩) সমধিকার প্রদানঃ জাতিসংঘ ভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌলিক অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে। সেহেতু গ্রগতি ও ব্যাপকতা স্বাধীনতায় উন্নতর মানবজীবন প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা রয়েছে ।
৪) সার্বজনীনতাঃ সদস্য রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌলিক অধিকার সমূহের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অংঙ্গীর হয়েছে।
৫) সমঝোতা প্রদর্শনঃ সব অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে এটি সাধারণ সমঝোতা প্রদর্শনে উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, সাধারণ পরিষদ এখন সব জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতি একটি সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে মানবিক অধিকারসমূহের এ সার্বজনীন ঘোষণাপত্র জারি করেছে। ওই লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অংগ ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এসব অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্য রাষ্ট্রসমূহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চল সমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে এগুলোর সার্বজনীন ও কার্যকারিতার স্বীকৃতি প্রাপ্তি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে মানবজাতির কল্যাণসাধনে ব্রত জাতিসংঘের মহান উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে তুলে ধরা হয়েছে, “Above all, the United Nations can contribute to human rights by contributing to general human rights by contributing to general welfare. The promotion of human rights as a purpose of the United Nation depends on other purposes.”
আরো জানুন: মানবাধিকারের উপাদান বা বৈশিষ্ট্য বা শর্ত