দলিলে বা জমিজমায় ব্যবহৃত শব্দ সমূহের বিস্তারিত ।

নিজেদের জমিজমা রক্ষার করার জন্য হলেও আপনার দলিল সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা প্রয়োজন। যখন আপনি এই সংক্ষিপ্ত শব্দগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত বা পরিষ্কার ধারনা অর্জন করতে পারবেন তখন আপনার দ্ধারা দলিল পড়া বা বুজা সহজ হবে এবং অন্য মানুষের চাইতে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন।

১। পেটিঃ জরিপ করার দরকার হয়। তখন জেলা প্রশাসককে সেটেলমেন্ট অফিসারের ক্ষমতা দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র এলাকার এই সেটেলমেন্ট কে পেটি খতিয়ান কোন কোন সময় নিদিষ্ট এক বা একাধিক মৌজা বিছিন্ন ভাবে জরিপ করার দরকার হয়।
২। নকশা-ম্যাপ: নকসা বলতে অক্ষাংশ ও দ্রাগিমাংশ নির্ণয় করে ভূমির অবিকল প্রতিচ্ছবিকে বুঝায়। নকশা বিভিন্ন স্কেলের হয়ে থাকে।
৩। রাজস্ব: সংস্কৃত রাজস্ব বা স্বত্ব যোগে নিষ্পন্ন, অর্থ রাজাকে দেওয়া কর বা খাজনা। বাংলাদেশ বর্তমানে এর প্রতিশদ্ধ ভূমি উন্নয়ন কর।
৪। তফসিল: জমির পরিচয় বহন করে এমন বিস্তারিত বিবরণকে “তফসিল” বলে। তফসিলে মৌজার নাম, নাম্বার, খতিয়ান নাম্বার, দাগ নাম্বার, জমির চৌহদ্দি, জমির পরিমাণ সহ ইত্যাদি তথ্য সন্নিবেশ থাকে।
৫। দাগ: যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহিৃত বা সন্ক্ত করার লক্ষে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদা নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে। একেক দাগ নাম্বারে বিভিন্ন পরিমাণ ভূমি পরিমাণ ভূমি থাকতে পারে। মূলত দাগ নাম্বার অনুসারে একটি মৌজার অধীনে ভূমি মালিকের সীমানা খুটি বা আইল দিয়ে সরেজমিন প্রদর্শন করা হয়।
৬। ছুট দাগ: ভূমি জরিপকাপলে প্রাথমিক অবস্থায় নকশা প্রস্তুত অথবা সংশোধনের সময় নকশার প্রতিটি ভুমি একেক যে নাম্বার দেওয়া হয় সে সময় ‍যদি কোন নাম্বার ভুলে বাদ পড়ে তাকে ছুটা দাগ বলে। আবার প্রাথমিক পর্যায়ে যদি দুটি দাগ একত্রিত করে নকশা পুন:সংশোধন করা হয় তখন যে দাগ নাম্বার বাদ যায় তাকেও ছুটা দাগ বলে।
৭। খানাপুরি: ভুমি জরিপের মাধ্যেমে জরিপের সময় মৌজা নক্সা প্রস্তুত করার পর খতিয়ান প্রস্তুতকালে খতিয়ান ফর্মের প্রত্যেকটি কলাম জরিপ কর্মচারী কতৃক পূরণ করার প্রক্রিয়াকে খানাপুরি বলে।
৮। আমিন: ভুমি জরিপের মাধ্যেমে নক্সা ও খতিয়ান প্রস্তুত ও ভুমি জরিপ কাজে নিযুক্ত কর্মচারীকে আমিন বলে।
৯। কিস্তোয়ার: ভুমি জরিপ কালে চতুর্ভূজ ও মোরব্বা প্রস্তুত করার পর সিকমি লাইনে চেইন চালিয়ে সঠিকভাবে খন্ড খন্ড ভুমির বাস্তব মৌগলিক চিত্র অংঙ্কনের মাধ্যমে নকশা প্রস্তুতের পদ্ধতিকে কিস্তোয়ার বলে।
১০। নামজারি: ক্রয়সূত্রে /উত্তরাধিকার সূত্রে অথবা যে কোন সূত্রে জমির নতুন মালিক হলে নতুন মালিকের নাম সরকারি খতিয়ানভুক্ত করার প্রক্রিয়াকে নামজারী বলে।
১১। জমা খারিজ: যৌথ জমা বিভক্ত করে আলাদা করে নতুন খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে। অন্য কথায় মুল খতিয়ান থেকে কিছু জমির অংশ নিয়ে নতুন জোত বা খতিয়ান সৃষ্টি করাকে জমা খারিজ বলে।
১২। খাজনাঃ সরকার বার্ষিক ভিত্তিতে যে প্রজার নিকট থেকে ভূমি ব্যবহারের জন্য যে কর আদায় করে তাকে খাজনা বলে।
১৩। দাখিলাঃ ভূমি কর/ খাজনা আদায় করে যে নির্দিষ্ট ফর্মে (ফর্ম নং- ১০৭৭) ভুমি কর/ খাজনা আদায়ের প্রমাণ পত্র বা রশিদ দেওয়া হয় তাকে দাখিলা বলা হয়। ১৯৮২ সালে এক সামরিক ফরমান বলে খাজনার পরিবর্তে একই হারে ভূমি উন্নয়ন কর ধার্য করা হয়।
১৪। কবুলিয়ত: রকার কর্তৃক কৃষক কে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রস্তাব প্রজা কর্তৃক গ্রহণ করে খাজনা প্রদানের যে অঙ্গিকার পত্র দেওয়া হয় তাকে কবুলিয়ত বলে।
১৫। নাল জমি: তফসিল সমতদ ভূমিকে নাল জমি বলা হয়।
১৬। খাস জমি : সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যে জমি সরকারের পক্ষে কালেক্টর বা ডিসি তত্ত্বাবধান করেন এমন জমিকে খাস জমি বলে।
১৭। ওয়াকফ: ইসলামি বিধান অনুযায়ী কোন ভূমি তার মালিক কতৃক ধর্মীয় ও সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় ভার বহন করার উদ্দেশ্যে কোন দান করাকে ওয়াকফ বলে।
১৮। মোতওয়াল্লীঃ যিনি ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থপনা তত্তবধান করেন তাকে মোতওয়াল্লী বলে। ওয়াকফ প্রশাসকের অনুমতি ব্যতিত মোতওয়াল্লী ওয়াকফ সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে না।
১৯। দেবোত্তরঃ হিন্দুধর্ম মতে ধর্মীয় কাজের জন্য উৎসর্গকৃত ভূমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে।
২০। ওয়ারিশঃ ওয়ারিশ অর্থ উত্তরাধিকারী। ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী কোন ব্যক্তি উইল না করে মৃত্যু বরণ করলে তার স্ত্রী, সন্তান বা নিকট আত্নীয়দের মধ্যে যারা তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে মালিক হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন এমন ব্যক্তি বা ব্যাক্তিগণকে ওয়ারিশ বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *