জমি কেনার পূর্বে অবশ্যই জানা প্রয়োজন । The Rules for Buying Land

জমি কেনার পূর্বে অবশ্যই জানা প্রয়োজন।The Rules for Buying Land

জমি কেনার পূর্বে অবশ্যই জানা প্রয়োজন।The Rules for Buying Land

মানুষ পৃথিবীতে সামাজিক ভাবে বসবাস করে সেই প্রাচীনকাল হতে। তখন মানুষের কোন স্থায়ী বসবাস করার চিন্তা ছিল না। তবে বর্তমানে এমনটি নয়। প্রতিটি মানুষের কম বেশি ইচ্ছা যে তার একটি স্থায়ী বসবাস করার স্থান থাকুক। নিজের জন্য না হলেও পরবর্তী প্রজন্ম যাতে করে সুখে থাকতে পারেন। এটি জন্য মানুষ তার উপার্জিত অর্থ দ্বারা নিরাপদ বিনিয়োগ বা স্বপ্নের ঠিকানা তৈরির জন্য জমি/ভূমি ক্রয় করতে চায়। সেই সঙ্গে আইনি জটিলতা তো আছেই। তবে এই ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি না জানা থাকার কারণে অনেকেই প্রতারিত হয়।জমি কেনার আগে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে। তাহলে আপনি বা আপনার পরবর্তী প্রজন্ম সুখে শান্তিতে সেই জমি ভোগ করতে পারবেন বলে আশা করি।

জমি ক্রয় করতে কি কি কাগজ লাগে? সকল কাগজপত্র দেখে নেই এক নজরে।

সর্বপ্রথম আপনাকে এই বিষয় গুলি জানতে হবে এবং অভিজ্ঞ ব্যাক্তি, আইনজীবি ও দলিল লেখক দ্বারা যাচাই করে নিতে হবে পর্চা গুলি অনলাইন থেকে পেতে পারেন

১। সি এস জরিপ (Cadastral Survey) ও সি এস খতিয়ান: বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন -1885 এর 101 (1) ধারার বিধান মোতাবেক সি এস জরিপ এ দেশে 1888 সালে কক্সবাজার থেকে শুরু হয়ে 1940 সালে দিনাজপুরে শেষ হয়। বৃহত্তর সিলেট জেলা বাদে মোট ৫৩ বছরে দেশের ১০০% ভূমি সরজমিনে প্লট টু প্লট জরিপ করে যে নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুত করে তাকে সি এস জরিপ বা ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে বলা হয়। এই খতিয়ানটি দুই পৃষ্ঠায় প্রস্তুনকরা হয়। প্রথম পৃষ্ঠায় থাকবে মালিকানার বর্ণনা ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় থাকে জমির বর্ণনা । এই জরিপের সময় জমির মালিক ছিলেন জমিদারেরা। তাই প্রথম পৃষ্ঠার উপরের অংশে জমিদারদের নাম এবং নিচের দিকে দ্বিতীয় অংশে জমিদারের অধীন রায়ত/বিভিন্ন শ্রেণীর প্রজার নাম ও তাদের অংশ বর্ণনা থাকে।

২। এস এ জরিপ বা এস এ খতিয়ান: রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর আওতায় জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের জন্য ১৯৫৬-১৯৬৩ সাল পর্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে যে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তাকে এস এ জরিপ বলা হয়। সাধারন লোকজন এ রেকর্ড কে ১৯৬২ সালের রেকর্ড হিসেবে উল্লেখ করে। উক্ত খতিয়ানে এক পৃষ্ঠার বিভিন্ন কলামে মালিকের নাম, মালিকের অংশ, দাগ, জমির পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ থাকে। দেশের বেশিরবাগ জেলায় সি এস খতিয়ানে মতো দুই পৃষ্ঠায় একটি ফরম এস এ খতিয়ানে ব্যবহার করা হয়। প্রথম পৃষ্ঠায় মালিকের নাম ও অংশ এবং দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় জমির পরিমাণ উল্লেখ থাকে। পরবর্তীতে সকল জরিপে এক পৃষ্ঠার ফরম ব্যবহার করা হয়।

৩। আর এস জরিপ বা আর এস খতিয়ান (Revisional Settlement): এটি হচ্ছে সংশোধনী জরিপ বা রিভিশনাল সেটেলমেন্ট বলা হয়। বাংলাদেশের ১৯৪০ সালে ফরিদপুর এ জরিপ শুরু হয এবং ১৯৬৫ সালে বৃহত্তর বাকেরগঞ্জ জেলায় এ ধরনের জরিপ সমাপ্ত হয়।ঢাকা জেরায় আরএস জরিপে সিএস খতিয়ানের মতো দুই পৃষ্ঠার ফরম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দেশের অন্যান্য জেলায় এক পৃষ্ঠায় একটি সংশোধিত ফরম ব্যবহার করা হয়।

৪। বি এস জরিপ বা বি এস খতিয়ান: ১৯৯৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান ভূমি জরিপ থেকে প্রস্তুতকৃত নথিকে বি এস খতিয়ান বলা হয়। ১৯৯৮ সালে ঢাকা মহানগর ভূমি জরিপ এর মাধ্যমে এই খতিনের উদ্বুদ্ধ হয়। (এই জরিপ কে সিটি জরিপ ও বলে) বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমি জরিপ চালু আছে এবং এই জমি জরিপের মাধ্যমে বিএস খতিয়ান প্রস্তুত হয়।

নামজারি খতিয়ান

জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন-১৯৫০ এর ১৪৩ ধারার আওতায় তাৎক্ষনিকভাবে রেকর্ড সংশোধন করার ক্ষমতা কালেক্টর তথা জেলঅ প্রশাসক ও তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) গণকে প্রদান করা হয়েছে। সম্পত্তি হস্তান্তরের কোন পদ্ধতিতে উত্তরাধিকারীসূত্রে ও অন্যান্য সূত্রে জমির মালিকানা পরিবর্তন হলে পূর্বতন মালিকের পরিবর্তে নতুন মালিকের নাম অন্তর্ভুক্ত করে খতিয়ানসেংশোধন করাকে রেকর্ড সংশোধন বলা হয়। সাধারনত এসএ এ্যান্ড টি আ্ক্টের ১৪৩, ১১৬, ১১৭ ধারার ক্ষমতাবলে কালেক্টর অথবা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেকর্ড সংশোধন করেন।

বিভিন্ন কারনে নামজারি বা রেকর্ড সংশোধনের উদ্ভব হতে পারে।

ক. ভূমি মালিকের মৃত্যুতে নামজারি বা উত্তরাধিকারগেণর নামে নামজারি। খ. রেজিসষ্ট্রি দলিল মূলে জমি হস্তান্তর ও নামজারি। গ) খাজনা অনাদায়ে জমি বিক্রি ও তৎসংশিষ্ট নামজারি, ঘ) স্বত্ব মামরার রায়/ডিক্রি মুলে নামজারি ঙ) এল, এ কেসের আওতায় নামজারি, চ) খাস খতিয়ানভুক্ত করণের ফলে নামজারি, ছ) সরকার কর্তৃক ক্রয়কৃত বা অন্য কোন খাসজমি বন্দোবস্তির কারণে নামজারি, জ) পরিত্যক্ত বা পয়স্তি জনিত কারণে রেকর্ড সংশোধন, ঝ) সমবায় সমিতির জমির ক্ষেত্রে নামজারি, ঞ) কবলা, গিফট ও উইল এর ক্ষেত্রে নামজারি ইত্যাদি নানাবিধ কারণে নামজারি বা রেকর্ড সংশোধন করার প্রয়োজন হয়।

জমি কেনার অবশিষ্ট বিষয়:

জমির দাগ নাম্বার,খাজনা রশিদ, মৌজা, তফসিল পরিচিতি, জমিরি পরিমান, দলিল যাচাই, বাজার মূল্য জানা, ওয়ারিশ এর জমি হলে তাহারেদ ওয়ারিশ সনদ, সরেজমিনে অবস্থান, জমি দখল বা মালিকানা নিশ্চিত করা, জমিতে কোন মামলা আছে কি না যাচাই করা, নিষ্কটক নিশ্চিত করা, জমির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন করলে অবশ্যই ব্যাংক এর মাধ্যমে করা ও উপস্থিত স্বাক্ষী রাখা, সঠিকভাবে আইন জেনে ও বুঝে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যাক্তি, আইনজীবি ও দলিল লেখক মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে। আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *