মানুষ যখন থেকে সামাজিকভাবে বসবাস করা শুরু করেছে তখন থেকেই মানুষের জমি বা সম্পদ ক্রয় করা শুরু করেছে। তখন থেকেই মানুষ তার সম্পদ রক্ষার জন্য নানা রকম পদ্ধতি অবলম্বন করতে থাকে। সর্বশেষ বা আধুনিক পদ্ধতি হচ্ছে দলিল রেজি: করা । তাই দলিলে ব্যবহৃত অনেক শব্দ আছে যার অর্থ না বুঝলে দলিল সম্পর্কে আপনার যে কোন সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে বলে মনে করি। শব্দের অর্থ জানতে নিম্নের শব্দ মনোযোগ সহ কারে পড়া প্রয়োজন।
১। বর্গা চাষী: বলতে ভূমিতে উৎপন্ন ফসলের ভাগ বুঝায়। কোন ব্যক্তি ভূমিতে উৎপ্ন ফসলের কোন নির্দিষ্ট অংশ ভূমি মালিককে দেয়ার শর্তে যদি চাষাবাদ করেন, তবে উক্ত চাষীকে বর্গাচাষী বলা হবে।
২। ফরায়েজ: ইসলামি বিধান মোতাবেক মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন করার নিয়ম ও প্রক্রিয়াকে ফরায়েজ বলে।
৩। র্কোফাঃ জমির নিম্নতম, মালিকানা, স্বত্ব বা অধিকারকে কোর্ফা বলে।
৪। চাকরান ভূমিঃ জমিদারগণ তাদের চারদেরকে বেতনের পরিবর্তে যে ভুমি ভোগ-দখলের সুবিধা প্রদান করতেন, তাকে চাকরান ভূমি বলে।
৫। বা ছুটা দাগ (Omitted List No): মকশা সংখ্যায়নে সময় যদি ভুলক্রমে কোন সংখ্যা বাদ পরে অথবা কোন কারনে কোন সংখ্যা বা দিতে হয় তাহলে নকশায় প্রকৃত অনুপস্থিত ঐ নম্বরকে ছুট দাগ বলে। ছুট দাগ নম্বর ম্যাপ/নকশার পাশে নোট করতে হয়।
৬। জে এল নম্বর ( Jurisdiction List No): থানা বা উপজেলাধীন প্রত্যেকটি মৌজাকে পর্যায়ক্রমে ক্রমিক নম্বর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়, এই নম্বর কে দাগ নম্বর বলে।
৭।বাটা দাগ (Divided plot); নকশা প্রস্তুতের সময় প্রত্যেক ভূমি খন্ডকে চিহ্নিত করার জন্য দাগ নম্বর দেয়া হয় । পরবর্তীকালে কোন দাগ বাস্তব প্রয়োজনে বিভক্ত করা আবশ্যক হতে পারে। যদি কোন দাগকে বিভক্ত করে আলাদাভাবে নতুনদাগ সৃষ্টি করে নম্বর দেয়া হয়, তাহলে বিষেশ পদ্ধিতীতে দাগ নাম্বার দেয়া হয়। পরবর্তী সময় এ নতুন সৃষ্ট নম্বরকে বাটা দাগ নম্বর বলে। এ নতুন সৃষ্ট দাগে বাটা দাগ নম্বর দেয়ার সময় বিভক্ত দাগের মুল নম্বর এর নীচে (বাই নম্বর) সীটের শেষ নম্বরে পরের নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। বাটা দাগ নম্বরে সীটের পার্শ্বে নোট করে প্রদর্শন করতে হয়।
৮।বারবরদারী খরচ : দলিলের দাতা রেজিস্ট্রী অফিসে বা কোন স্বাক্ষী আদালতে উপস্থিত হতে অপারগ হলে, সাব- রেজিস্টার বা কমিশনার উক্ত ব্যক্তিবর্গের বাড়িতে গমনাগমনের জন্য যে খরচ হয়, তাকে বারবরদারী খরচ বলে।
৯।চালা (Highland): বাদী উঁচু জমি যেখানে সাধারনত শাক-সবজির চাষ করা হয়, তাকে চালা বলা হয় ।
১০।বয়নামাঃ ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি ২১ আদেশের ৯৪ নিয়ম অনুসারে কোন স্থাবর সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় চুড়ান্ত হলে আদালত নিলামকৃত সম্পত্তির বিবরণ সংবলিত যে সনদ প্রদান করেন তাকে বয়নামা বলে। বয়নামা নিলাম ক্রেতার নামসহ অন্যান্য তথ্যাবলি লিপিবদ্ধ থাকে। যে তারিখ নিলাম বিক্রয় চূড়ান্ত হয় বয়নামায় সে তারিখ উল্লেখ
করতে হয়।
১১। দখলনামা : দখল হস্তান্তরের সনদপত্র। সার্টিফিকেট জারীর মাধ্যমে কোন ব্যক্তি কোন সম্পত্তি নিলাম খরিদ করে নিলে সরকার পক্ষ সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দেয়ার পর যে সনদপত্র প্রদান করেন, তাকে দখল নামা বলে। সরকারের লোকজন সরজমিনে গিয়ে ঢোল পিটিয়ে, লাল নিশান উড়ায়ে বা বাঁশ গেড়ে দখল প্রদান করেন । এছাড়া কোন ডিক্রিজারীর ক্ষেত্রে কোন সম্পত্তি নিলামে বিক্রয় করা হলে আদালত ওই সম্পত্তির ক্রেতাকে দখল বুঝিয়ে দিয়ে যে সার্টিফিকেট প্রদান করেন তাকেও দখলনামা বলা হয়। যিনি সরকার অথবা আদালতের নিকট থেকে কোনো সম্পত্তির দখলনামা প্রাপ্ত হন ধরে নিতে হবে যে দখলনামা প্রাপ্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে দখল আছে।
১২। জমাবন্দি : জমিদারী আমলে জমিদার বা তালুকদারের সেরেস্তায় প্রজার নাম, জমি ও খাজনার বিবরনী লিপিবন্ধ করা হত যা জমাবন্দি নামে পরিচিত। বর্তমানে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অঅনুরূপ রেকর্ড রাখা হয় ।
১৩।আমলনামা : আমলনামা বা হুকুমনামা বলতে জমিদারের কাছ থেকে জমি বন্দোবস্ত নেয়ার পর প্রজার স্বত্ব ও দখল প্রমানের দলিলকে বুঝায় । সংক্ষেপে বলতে গেলে জমিদার কর্তৃক প্রজার বরাবরে দেয়া জমির বন্দোবস্ত সংক্রান্ত নির্দেশপত্র
১৪। ভিটি (Highland); এমন অনেক উঁচু জমি আছে যেখানে বসবাসের জন্য বাড়ীঘর নির্মাণ না করে চাষাবাদ করা হয়। বাড়ীঘর করার যোগ্য এমন উঁচু ভূমিকে ভিটি জমি বলে।
১৫। ছড়া (Downward strip land): পাহাড় বা টিলার যে সকল এলাকা সমতল ভূমির দিকে ঢালু হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে তাকে ছড়া বা ছড়ি বলা হয়।
১৬।বাওড়ঃ প্রাকৃতিক বা অন্য কারনে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে পূর্বের গতিপথের স্রোত প্রাকৃতিক কারণে বন্ধ হয়ে যে বিস্তীর্ণ জলাভূমি সৃষ্টি করে তাকে বাওড় বলে।
১৭। হাওড়ঃ প্রাকৃতিক কারনে সৃষ্ট বিস্তীর্ণ জলমগ্ন নিম্ন জলাভূমি হাওড় নামে পরিচিত । হাওড় এলাকা বিলের চেয়ে বড় ।
১৮। Drain: রাস্তা নির্মানের সময় দুধার থেকে মাটি তোলার কারণে নালা সৃষ্টি হয়। রাস্তার দুধারে সৃষ্ট এসব নালাকে নয়নজুলি বা ড্রেন বলা হয়।
২০। বিলঃ বিস্তৃতীর্ণ আবদ্ধ স্বাদু গানরি জলাভূমি যেখানে অতিরিক্ত পানি এসে জমা হয়।
২১। ঝিলঃ লম্বাকৃতি জলাভূমি, ছো আকৃতির বিল।
২২।তৌজি-১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীয় জমির জন্য কালেক্টরীতে যে রেজিস্ট্রী বই থাকে তাকে বলা হয়। জমিদারের অধীনে প্রজায় জোতকেও তৌজি বলা হয়।
২৩। জোত/হোল্ডিং: একটি খতিয়ানে এক বা একাদিক দাগ থাকতে পারে, এরূপ একটি খতিয়ানভূক্ত ভূমিকে হোল্ডিং/জোতজমা বলে। জোতের প্রতিটি নম্বরকে জোতনং বা হোল্ডিং নং বলে। সাধারনত জোতনং এর উপর ভিত্তি করে খাজনা পরিশোধ করা হয়ে থাকে ।